বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফেরত আনার বিভিন্ন উদ্যোগ অব্যহত রেখেছে সরকার। বিশেষ করে কানাডাতে নুর চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া সচল রাখার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। এই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি এবং এটি শেষ করার জন্য যা যা করা দরকার সব করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, কানাডার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মামলা করেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট রাশেদ চৌধুরীর বিষয়টি পরিচালনা করছে।
নুর চৌধুরী
বঙ্গবন্ধু খুনিকে ফেরত আনাতে জনমত তৈরি করার জন্য কানাডায় বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ডায়াসপোরাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আগামী অক্টোবর নভেম্বর মাসে ওই দেশে ইলেকশন আছে এবং সেখানে বাংলাদেশিরা যারা ভোট চাইতে আসবে বা তাদের নির্বাচনি এলাকার জনপ্রতিনিধি কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘ডায়াসপোরারা বলতে পারে যে তোমাদের দেশে বাংলাদেশের একজন খুনি অবস্থান করছে এবং তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগকে তোমরা সহায়তা করতে পারো বা সমর্থন করতে পারো।’
এটি নিয়ে জোরেশোরে কাজ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কানাডার ক্ষেত্রে জনমত তৈরি করা কিছুটা সহজ। কারণ ওখানে বড় কয়েকটি শহরে যেমন টরন্টো, ভ্যানকুভার, অটোয়া ও মন্ট্রিয়েল–এই প্রধান শহরে টার্গেট করে জনমত তৈরি করা যায়।
‘কানাডাতে যে আইনজীবীদের নিয়োগ করা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে এবং এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি,’ জানান তিনি।
মামলার পরিস্থিতি কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি একটি আইনি বিষয় এবং তাদের পরামর্শ ছাড়া আগে থেকে কোনও কিছু বলা ঠিক হবে না।’
রাশেদ চৌধুরী
যুক্তরাষ্ট্রে রাশেদ চৌধুরী সংক্রান্ত যে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল সেটি আবার উজ্জীবিত করা হয়েছে এবং সেটাও চালু আছে।
রাশেদ চৌধুরীর মামলাটি মার্কিন বিচার বিভাগ নিজে থেকেই করবে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আগে যে মামলাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেটি আবার চালু হয়েছে। কিন্তু নতুন প্রশাসন এসেছে এবং বিভিন্ন পদে ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে।’
উল্লেখ্য, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে সেটি গ্রহণ করে অভিবাসন কোর্ট। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুনি রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে একাধিক পত্র দেওয়ার পরে সাবেক এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার খুনির রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা শুরু করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমাদের সবসময় যোগাযোগ ছিল এবং আছে। কিন্তু ডিপার্টমেন্ট যেটি বলে সেটি হচ্ছে—এটি একটি আইনি বিষয় এবং তারা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের বিষয়ে কোনও নাক গলায় না।’
‘এটর্নি জেনারেলের অফিসের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগের কোনও সুযোগ নাই। আমাদের মাধ্যম হচ্ছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। আর তারাই আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে প্রক্রিয়াটি চলমান আছে,’ জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অনেক বড় দেশ। সেখানে নির্বাচনি প্রক্রিয়া বা অন্য কিছু কানাডা থেকে ভিন্ন। কিন্তু তারপরেও সেখানেও জনমত তৈরি করার সুযোগ আছে।
অন্য খুনিরা
বঙ্গবন্ধুর অন্য তিন খুনি—খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন কোথায় আছে এ সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য নেই সরকারের কাছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘অন্যদের সম্পর্কে আমরা যদি কোনও তথ্য পেয়ে থাকি, সেগুলো আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ফলোআপ করি এবং উপেক্ষা করি না।’
এটি আমরা সঠিকভাবে ফলোআপ করি। তবে ফলস এলার্মও থাকে। তারপরও আমরা এগুলো শেষ পর্যন্ত দেখে থাকি,’ জানান মাসুদ করিম।
সৌজন্যে
বাংলা ট্রিবিউন।