spot_img
Home বাণিজ্য পেয়াজ এর দাম বৃদ্ধি, সোমবার বৈঠক

পেয়াজ এর দাম বৃদ্ধি, সোমবার বৈঠক

পেয়াজ এর দাম বৃদ্ধি,  সোমবার বৈঠক

পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ার পরও অসাধু ও অতি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে অস্থির পেঁয়াজের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম। ফলে রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি উঠে গেছে ৮০ টাকায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে আগামী ১১ অক্টোবর (সোমবার) স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বাণিজ্যমন্ত্রী। ইত্যোমধ্যে ১১টি জেলার ডিসিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি জানার জন্য। পাশাপাশ মনিটরিংও বাড়ানো হয়েছে।

আশা করা যাচ্ছে, পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকার ওপর উঠবে না।

তবে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর এই অজুহাত মানতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ লাখ টন। এরমধ্যে দেশে উৎপাদন হচ্ছে ৩৩ লাখ টন। সংরক্ষণের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বাকি থাকে ২৩ লাখ টন। আর প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ সবসময় উদ্বৃত্ত থাকে। বর্তমানে কৃষকের কাছে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। যা দিয়ে আগাসী জানুয়ারি পর্যন্ত চলা যাবে। কিন্তু ভারতে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কিন্তু এটা কেন বাড়বে। এবছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। দাম বাড়লে ভারতের পেঁয়াজের দাম বাড়বে। দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা নয়। মূলত অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের জন্য আজকে পেঁযাজের বাজারে এই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র বলেছে, ভারত, মিয়ানমারসহ অন্যান্য যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে, সেসব দেশ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেনি। এছাড়া বড় কোনো সমস্যাও নেই। তাহলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি পেঁয়াজ কেন ৩৫ টাকা বাড়বে? এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কিছুই না।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দেশে পেঁয়াজের কোন স্বল্পতা নেই। ভারতে বৃষ্টি হলে দেশে দাম বেড়ে যাবে এমনতো হতে পারে না। হুজুকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমাদের কাছে যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। ৪০ টাকার পেঁয়াজ এখন ৭০ টাকা হলো কেন? দেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির তো কথা না। ভারতে ৭ থেকে ৮ রুপি দাম বেড়েছে। দাম বাড়লে ভারতেরটা দাম বাড়বে। কিন্তু দেশি পেঁয়াজের দাম কেন বাড়লো? আমাদের দেশেতো পেঁয়াজ আছে উৎপাদন ভালো হয়েছে। ২৮ লাখ টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনিটরিং করছি কিন্তু, গ্রামে গ্রামে গিয়ে তো সম্ভব না। পেঁয়াজ নিয়ে আমাদের মনিটরিং চলছে। ইতোমধ্যে সব ডিসিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ১১টি জেলায় যেখানে পেঁয়াজ উৎপাদন বেশি হয়। এখন আমরা ডিসিদের কাছ থেকে মজুদ পরিস্থিতি জানতে চেয়েছি। হাটে হাটে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এ বিষয়ে সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী সব স্টেকহোল্ডার নিয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকের পরই আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম কী হবে সেটা জানা যাবে। আমরা দাম নিয়ন্ত্রণে আনার চেস্টা করছি। আশা করছি, পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ এর ওপরে উঠবে না। এছাড়া আমরা ভারতের বাইরে ময়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছি।

পেঁয়াজের দাম বাড়াতে কোন সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে সিন্ডিকেট কোন বিষয় না। সিন্ডিকেট করতে ৫ থেকে ৬ জন লোক লাগে। কিন্তু বিষয়টা হয়েছে রুট লেবেল থেকে একজন কৃষক ১২শ টাকা মনের পেঁয়াজ হঠাৎ ২২শ করে দিয়েছে। এটাকে আপনি কী বলবেন? এখন মোবাইলের যুগ ভারতে সমস্যা হলে সারাদেশে সেটা ছড়িয়ে যায়। এভাবেই দামটা বেড়েছে। তবে, আমাদের ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে। গতকালও ১২০ ট্রাক ঢুকেছে। আমাদের প্রতিদিন ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আসে। এটাকে আমি সিন্ডিকেট বলবো না। সবাই মিলে সুযোগে পা দিলো।

টিসিবির ৪০০ ট্রাকে পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে সারাদেশে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। টিসিবি আগে মাসে ১২ দিন বিক্রি করতো একন ২৪ দিন বিক্রি করছে। বর্তমানে সারা বছরই টিসিবির কার্যক্রম পরিচালত হয়। আগে শুধু রোজার মাসে বিক্রি হতো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন) মনিরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। তারপরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আসলে যারা মূল আড়তদার তারাই সিন্ডিকেট করে এ দাম বাড়িয়েছে বা বাজরকে অস্থিতিশীল করেছে। তবে, পেঁয়াজের দাম কখনো ৬০ টাকার নিচে হওয়া উচিত না। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে সিন্ডিকেটের একটা প্রতিফলন।

তিনি বলেন, আজ আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এসেছি। তারা জানিয়েছেন ৮০ সাধরণ কৃষকদের পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে গেছে। এখন যাদের কাছে পেঁয়াজ আছে তারা অবস্থা সম্পন্ন। আড়তদার ও অতি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা মূলত এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষকদের কাছে এ মুহূর্তে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। যা দিয়ে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে। পাশাপাশি ডিসেম্বরে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এ বছর ব্যবসায়ীরা এলসি না খুলে নিজেরাই পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here