
সংকট কবলিত শ্রীলঙ্কার মোট বিদেশি ঋণের ৫১ বিলিয়ন বা পরিমাণ পাঁচ হাজার একশ’ কোটি ডলার। মঙ্গলবার দেশটি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তা পাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা এই ঋণের পুরোটাই খেলাপি থাকবে। বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
কোনও দেশের বিদেশি ঋণ হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক, সরকার কিংবা আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশি ঋণদাতাদের কাছ থেকে ধার নেওয়া অর্থ।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দনাল বীরেসিঙ্গে বলেন, ‘এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছি যে ঋণ পরিশোধ চ্যালেঞ্জিং ও অসম্ভব হয়ে পড়েছে’।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো যে পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা হচ্ছে ঋণ পুনর্গঠন করা ও কঠিন খেলাপি হওয়া এড়ানো।’
শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ঋণ পরিশোধ সাময়িকভাবে বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ১২ এপ্রিল থেকে এই ঘোষণা কার্যকর হবে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইএমএফ-এর সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তি কার্যকর হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী মেয়াদে ঋণ পরিশোধ বাতিল থাকবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আইএমএফ-এর কাছে সহায়তা চেয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কর্মসূচি গঠন এবং জরুরি তহবিল বরাদ্দের আবেদন নিয়ে আইএমএফ-এর দ্বারস্থ হয়েছে শ্রীলঙ্কা। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অন্য বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগীদের কাছ থেকেও আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে সরকার।’
রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে একটি ঋণ কর্মসূচি নিয়ে আইএমএফ-এর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে শ্রীলঙ্কা। ভারত ও চীনের কাছেও সহায়তা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার।
শ্রীলঙ্কা গত কয়েক মাস ধরে সরকারি ঋণ সংকটে রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ওষুধ, গুঁড়ো দুধ, রান্নার গ্যাস, কেরোসিন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে পড়েছে।
জ্বালানি সংকটের কারণে প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা লোডশেডিংয় চলছে । রান্নার গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে শত শত বেকারি। বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে সার্জারি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাগজ না থাকায় নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। কয়েকটি পত্রিকার ছাপা বন্ধ হয়েছে।
এর আগে ৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়া শ্রীলঙ্কার পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করে।