মহাভারতে অর্জুনের ছদ্মনাম বৃহন্নলা। বিরাটরাজ্যে অজ্ঞাতবাসের সময় পুরুষও নয়, নারীও নয়—এমন অস্তিত্বে অর্জুন আত্মগোপন করেছিলেন। এই তৃতীয় শ্রেণির মানব অস্তিত্বের উপযোগিতা পৌরাণিক মহাভারতে স্বীকৃতি পেলেও আজকের একুশ শতকে নারী এবং পুরুষ—এই দুই লিঙ্গের বাইরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের যে বাস্তব অস্তিত্ব আছে, তাঁর স্বীকৃতি সর্বান্তঃকরণে এ সমাজ এখনো দেয়নি। সে কারণেই পরিজনদের দ্বারা নির্বাসিত বৃহন্নলা বা হিজড়ারা পেটের দায়ে যৌনকর্মী কিংবা ভিক্ষুকের অসম্মানজনক জীবন বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁরা যতই ‘পৃথিবী আমারে চায়’ বলে আত্মোপযোগিতা প্রচার করুন, প্রতি মুহূর্তে তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে—তুমি অচ্ছুত, পৃথিবীর তোমাকে দরকার নেই।
এই বিকৃত ব্যাধিগ্রস্ত মানসিকতার মুখে একটি বিনম্র চপেটাঘাত করেছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল। গত শনিবার জেলা প্রশাসনের সভা চলাকালে হিজড়া জনগোষ্ঠীর করুণ চিত্র তুলে ধরে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মারুফ এবং জনি হোসেন নামের দুজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নিজ কার্যালয়ে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে (মাস্টার রোলে) চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করা মারুফকে কম্পিউটার অপারেটর এবং অষ্টম শ্রেণি পাস জনি হোসেনকে অফিস সহায়কের কাজ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেছেন, পরবর্তীকালে সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এই দুজনকে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে তাঁদের বর্তমান পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া রাজশাহীতে প্রকৃত হিজড়াদের শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে যোগ্যতানুসারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।