
ঢাকায় ফিরে আমি বঙ্গবন্ধুকে জানিয়েছিলাম সাংবিধানিক আলোচনার কোনো প্রস্তুতি পিপিপির নেই এবং ভুট্টোর নিজের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা হয়তো ভিন্নতর লক্ষ্যে ধাবিত। ১২ জানুয়ারি ১৯৭১ ইয়াহিয়ার ঢাকা সফরের সময় এই অ্যাজেন্ডা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। সাংবিধানিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করার বদলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে নিজের সাংবিধানিক খেলা বেছে নেন ইয়াহিয়া। ঢাকার এসব বৈঠক থেকে ইয়াহিয়া সম্ভবত নিশ্চিত হয়ে যান যে ছয় দফার ভিত্তিতে একটি সংবিধান তৈরি করতে বদ্ধপ্রতিজ্ঞ বঙ্গবন্ধু। এই অনুমানের ভিত্তিতে ইয়াহিয়া তাঁর সামরিক চক্রের পরবর্তী কার্যকলাপ স্থির করেছিলেন। ঢাকায় অক্টোবর ১৯৬৯ থেকে এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত ১৪ নম্বর ডিভিশনের জিওসি থাকাকালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছে তার উদ্ঘাটক স্মৃতিচারণা আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি বইটি। ১২ জানুয়ারি ১৯৭১ ঢাকার এই বৈঠকে ইয়াহিয়ার প্রতিক্রিয়ার বর্ণনা করেছে বইটি:
‘শেখ মুজিব এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও রাজি ছিলেন না। ফলে বিরক্ত হয়ে বৈঠক বন্ধ করে দেন প্রেসিডেন্ট। বেশ ক্রুদ্ধ হয়ে ঢাকা ছাড়লেন তিনি এবং সেখান থেকে লারকানায় গিয়ে ভুট্টোর অতিথি হলেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন জেনারেল আবদুল হামিদ খান (আর্মি চিফ অব স্টাফ)। পরবর্তী দুই দিনে দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।’
রাজার মনোগ্রাহী মুখবন্ধ এবং লারকানা বৈঠক নিয়ে তার প্রতিফলন যে ঠিক ছিল, সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত হই চার যুগ বাদে, যখন লারকানায় ইয়াহিয়া–ভুট্টো বৈঠকের পরিণতির একটি চমৎকার অন্তর্দৃষ্টি আমাকে দেওয়া হলো। ২০১১ লাহোর সফরের সময় এই প্রমাণ আমাকে দেয় আমার এক এইচেসন বন্ধু। সে আমাকে জানায়, ১৯৭১–এর ঘটনার প্রধান চরিত্রের একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুলাম উমরের সঙ্গে তার সম্প্রতি সাক্ষাৎ হয়েছে। উমর সে সময় জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনীতিকদের বাগে আনতে তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন ইয়াহিয়া। বহুদিন আগে অবসর নেওয়া বয়স্ক কিন্তু প্রখর–স্মৃতি উমরকে ২৫ মার্চের পরিণতির জন্য যে ঘটনাবলি দায়ী সেভাবে তার কী ভূমিকা ছিল, সেটা খুলে বলার জন্য চ্যালেঞ্জ করেছিল আমার বন্ধু।