
করোনা মহামারির মধ্যে গত এক বছরে মানুষের আয় না বাড়লেও খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। শুধু নিত্যপণ্য কিনতে গিয়েই সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকে। বাজারের চিত্র বলছে, অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে অন্তত ১২টি নিত্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আদা ও হলুদের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে এক কেজি আদা কিনতে ভোক্তাদের ৪০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে যে আদার দাম ছিল ১০০ টাকা কেজি। এখন সেই আদার দাম ১৪০ টাকা কেজি। একইভাবে প্রতি কেজি দেশি হলুদের দামও বেড়েছে ৪০ টাকার মতোই। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যে হলুদের দাম ছিল ১৪০ টাকা কেজি। এখন সেই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি।
এদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক বছরে দুটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ। পণ্য দুটি হলো: ভোজ্যতেল ও রসুন। টিসিবির হিসেবে ৭০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে খোলা পাম অয়েলের দাম। একইভাবে আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশেরও বেশি। এছাড়া ৫০ শতাংশেরও বেশি দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। গত একবছরের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। গত এক বছরের ব্যবধানে সয়াবিন তেল ৫ লিটার বোতলের দাম বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। এক লিটার বোতলের দাম বেড়েছে ৪১ শতাংশ। আর পাম অয়েল সুপারের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশ। একইভাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশি হলুদের দাম বেড়েছে ৪১ শতাংশ। মসলাজাতীয় লবঙ্গের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ। তেজপাতার দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ২৩ শতাংশ।
বাজারের চিত্র বলছে, সব ধরনের আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে খোলা আটার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ।

ক্রেতারা বলছেন, দরকারি অধিকাংশ পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘করোনা মহামারি মানুষের আয় কমিয়ে দিয়েছে। ব্যাংকে টাকা রেখেও এখন আগের মতো মুনাফা পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়ে সীমিত আয়ের মানুষজন।’ জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান থাকা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের এই সময়ে আমদানি করা রসুনের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। সেই রসুনের দাম এখন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি। একইভাবে গতবছরের এই সময়ে দেশি হলুদের দাম ছিল ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। এখন সেই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া ২০২০ সালের এই সময়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় এক লিটার খোলা পামওয়েল পাওয়া যেত। এখন সেই পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৬ টাকা দরে। একইভাবে গত বছরে যে পাম অয়েলের (সুপার ) দাম ছিল ৭১ থেকে ৭৫ টাকা। সেই পাম ওয়েল এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৬ টাকা থেকে ১২০ টাকা লিটার দরে।
গত বছরের এ সময়ে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। এখন সেই পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি।

এছাড়া বাজারে নতুন করে তেল, ডাল ও চিনির দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় পাঁচ টাকা করে বেড়ে গেছে। তবে গত সপ্তাহে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচের দাম কমে এখন প্রতি কেজি ৮০ টাকায় নেমেছে। এছাড়া স্থিতিশীল রয়েছে কিছু সবজির দাম।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা। যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৩৩ থেকে ১৩৫ টাকা। একইসঙ্গে বেড়েছে পাম তেলের দামও। একইভাবে চিনির দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় ঠেকেছে। আর গত সপ্তাহে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া মসুর ডাল এখন ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে চালের খুচরা বাজারে মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৫, আটাশ ৫০ থেকে ৫৫, স্বর্ণা ৪৭ থেকে ৫০ ও নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও ইলিশের দাম কমছে না। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের বেশি ইলিশ প্রতিকেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকৃতির ইলিশ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বোচ্চ ১৪০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বিক্রি করতেও দেখা গেছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর ১০ শতাংশ বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে